কভিডকালে দেশজুড়ে মাসের পর মাস ছিল লকডাউন। মারাত্মক প্রভাব পড়ে জীবনযাপনে। সে ধাক্কায় দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়ায় বলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর
কভিডকালে দেশজুড়ে মাসের পর মাস ছিল লকডাউন। মারাত্মক প্রভাব পড়ে জীবনযাপনে। সে ধাক্কায় দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়ায় বলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে উঠে আসে। ওই সময় অনেকটাই নীরব ভূমিকা পালন করায় প্রশ্ন উঠেছিল নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশন (এনজিও) বা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কার্যক্রম নিয়ে। কেননা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের মধ্য দিয়েই অলাভজনক এসব প্রতিষ্ঠানের যাত্রা। পরবর্তী সময়ে বেড়েছে এর ক্ষেত্র ও সংখ্যা। তবে কার্যপরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক উন্নয়নের মূল জায়গা থেকেও এনজিওগুলো ক্রমেই সরে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, প্রান্তিক মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের মতো উদ্যোগ থেকে সরে এসে দেশের বৃহদাকারের এনজিওগুলো এখন করপোরেট কালচারের দিকে যাচ্ছে।
এনজিও বড় একটি খাত উল্লেখ করে নিজেরা করির সমন্বয়ক ও অধিকারকর্মী খুশী কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এখানে খুব ছোট এনজিও যেমন আছে, আবার অনেক বিশালও আছে। ফলে এনজিও খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি ধরনের মধ্যে নির্দিষ্ট করা যাবে না। ছোট বা বড় হোক অধিকাংশ এনজিও মাইক্রো ফাইন্যান্স নিয়ে কাজ করে। মাইক্রোক্রেডিট যারা করেন তাদের জন্য কর্তৃপক্ষ আছে। আর যারা বাইরে থেকে টাকা নিয়ে এসে কাজ করে তাদের জন্য আছে এনজিও ব্যুরো। এদের অনুমতি ছাড়া অর্থ নিয়ে আসা যায় না। এ ধরনের কিছু ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এ ব্যবস্থাগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কিনা সেটা দেখতে হবে। এনজিওর জবাবদিহিতা অবশ্যই থাকা দরকার বলে আমি বিশ্বাস করি। সবার কাছে, শুধু যাদের কাছ থেকে টাকা আনে বা সরকারকে জানানো সেটা না, এনজিওর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সবার কাছে থাকা উচিত। বিশেষ করে যাদের সঙ্গে কাজ করছে তাদের কাছে আরো বেশি থাকা উচিত।’
সংস্কারের প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে খুশী কবির বলেন, ‘যত জবাবদিহিতা এবং সুশাসনের স্বচ্ছতা থাকুক সেটা প্রত্যেকটি সংস্থা ও ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। এনজিও খাতের সংস্কার নির্ভর করবে দুটি জায়গায়। এ খাতে যারা আছেন তারা যদি মনে করেন সংস্কারের প্রয়োজন আছে আর দ্বিতীয় হলো যাদের সঙ্গে এনজিও কাজ করে তারা কি মনে করেন সেটা? অধিকাংশ এনজিও এখন মাইক্রোক্রেডিট সেবা দেয়। এক্ষেত্রে অস্পষ্টতার সুযোগ অনেক আছে।’
একই কথা জানিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘একটা দেশে অপশাসনের চর্চা তৈরি হয়েছে। আমরা খুব জোরালোভাবে বলছি, যে সংস্কার রাষ্ট্রের হওয়া প্রয়োজন, ঠিক একই সংস্কার এনজিওগুলোরও হওয়া প্রয়োজন। এনজিওর ভেতরেও অনেকগুলো স্কোপ রয়েছে। এখানে স্বচ্ছতা আরো আসতে পারে। যদিও সরকারের শাসন ব্যবস্থার চেয়ে এনজিওগুলোর স্বচ্ছতা তুলনামূলক বেশি। এনজিওগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে, যেটা সরকারের ঘাটতি পূরণে ভীষণ সাহায্য করে।’
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘আমাদের সুশাসনের ঘাটতি আছে। আরো দক্ষ ব্যবস্থাপনায় আসা উচিত। বড় এনজিওগুলো এখন করপোরেট ম্যানেজমেন্ট কিছুটা আত্মস্থ করে নিয়েছে কিন্তু ছোটগুলো সেভাবে পারেনি। অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা, দক্ষতা, সুশাসনে এনজিওগুলোর ঘাটতি আছে। এগুলো আরো এফিশিয়েন্ট করা দরকার। গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো রাষ্ট্র এনজিওকে নিয়ে কী করতে চায়। আর এনজিওগুলো কীভাবে রাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে চায়। এ জায়গায় নতুন করে দেখা খুব দরকার।
এনজিওগুলোর সবচেয়ে বৃহৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেশের বৃহৎ এনজিওগুলোর সেই ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের চিত্র উঠে আসে। তাতে দেখা যায় ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। এর ৪৩ শতাংশই বিতরণ করেছে ব্র্যাক। আশা বিতরণ করেছে ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ১৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ বিতরণ হয়েছে। টিএমএসএস, প্রশিকা, আরডিআরএস বাংলাদেশ ও কারিতাস বিতরণ করেছে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৯০, ১ দশমিক ৪৯, ১ দশমিক ৪২ এবং শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণ।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ মাজেদুল বণিক বার্তাকে বলেন, কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমাদের কী ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন সে ধরনের সুপারিশ চাওয়া হয়েছে। আমরা সেগুলো জমা দিয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সংস্কারের পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হবে। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও আমরা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আলোচনা করি। তাদেরও আইনসংক্রান্ত কিছু সুপারিশ রয়েছে, যেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি বা ব্র্যাক নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন ফজলে হাসান আবেদ। গ্রামীণ শিশুদের শিক্ষা, গ্রামীণ দরিদ্র বিশেষত নারীপ্রধান অতিদরিদ্র পরিবারের আর্থসামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করাসহ নানা ধরনের আর্থসামাজিক কার্যক্রম নিয়ে দশক দুইয়ের মধ্যেই শক্ত একটি অবস্থান দাঁড় করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ মানুষের কাছ থেকে উৎপাদিত পণ্য নিজেরাই বাজারজাত করতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে ৭০ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করেছে।
ব্র্যাক পরিচালিত আড়ংয়ের রয়েছে কারুশিল্পের ব্যবসা। এছাড়া এনজিওটির রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, ডেইরি ফার্ম। প্রসারমাণ বাজারের সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র উৎপাদনকারীদের যোগসূত্র স্থাপনের লক্ষ্যে ব্র্যাকের রয়েছে প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, হিমাগার, বীজাগার, চিংড়ি ও মৎস্য হ্যাচারি এবং বুল অ্যান্ড বাক স্টেশন (হিমায়িত সিমেন উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিতরণ) এবং ৬০ জেলার ১ হাজার ৮৫৯টি ইউনিয়নে গো-প্রজনন (গরু ও ছাগল) কেন্দ্র। এছাড়া শস্যের বৈচিত্র্যায়ন এবং নতুন চাষপদ্ধতি উদ্ভাবনকল্পে ব্র্যাকের রয়েছে একটি নিজস্ব টিস্যু কালচার গবেষণাগার এবং চারটি বীজ গবেষণা ও উৎপাদন কেন্দ্র। যদিও এসব বাণিজ্যিক উদ্যোগ থেকে অর্জিত লভ্যাংশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণসহ নানা কার্যক্রমে ব্যয়িত হয় বলে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করে থাকে।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
আশির দশকে প্রতিষ্ঠা করা হয় ক্ষুদ্র ঋণভিত্তিক এনজিও টিএমএসএস। অধ্যাপিকা ড. হোসনে-আরা বেগমের হাতে গড়া এ প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও আর্থসামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন। ব্যবসায়িক দিক থেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে টিএমএসএস। যেখানে পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ, টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটসহ ৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগের আওতায় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো টিএমএসএস হস্তশিল্প, টিএমএসএস প্রিন্টিং প্রেস, টিএমএসএস এগ্রো বেইজড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, টিএমএসএস ডেইরি ফার্ম, টিএমএসএস ডোমেস্টিক এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি, টিএমএসএস সিকিউরিটি এজেন্সি লিমিটেড, টিএমএসএস মম-ইন বিনোদন পার্ক, টিএমএসএস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেডসহ অন্যান্য। একইভাবে কৃষি, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও মানবাধিকার বিষয়েও প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
গ্রামীণ জনপদের ভূমিহীন মানুষকে ঋণ সুবিধা দিতে ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার এ সামাজিক উদ্যোগকে দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে তিনি প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের গঠন করা রিভিউ কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে সব মিলিয়ে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলোয় ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তারা পর্ষদ পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৯৪ সালে গ্রামীণ ফান্ড নামে একটি সীমিত দায়ের অলাভজনক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। নোরাড, সিআইডিএ, এসআইডিএ, ইউএস এইড ও ফোর্ড ফাউন্ডেশনের অর্থ সাহায্যে গঠিত সোশ্যাল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড (এসভিসিএফ) থেকে গ্রামীণ ফান্ড প্রতিষ্ঠা করার সময় ৪৯ কোটি ১০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তী সময়ে এসভিসিএফ ফান্ড থেকে ৪৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোগে গ্রামীণ কল্যাণ নামে আরেকটি অলাভজনক সীমিত দায়ের কোম্পানি গঠন করা হয় ১৯৯৬ সালে।
পরবর্তী সময়ে এই গ্রামীণ ফান্ড ও গ্রামীণ কল্যাণের একক ও যৌথ উদ্যোগে ইকুইটি ও ঋণ সহায়তার মাধ্যমে ৩৪টি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। এছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে দেশে-বিদেশে আরো ১১টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এর মধ্যে গ্রামীণ ফান্ড ১৫টি ও গ্রামীণ কল্যাণ ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন করছে। গ্রামীণ কল্যাণের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম আরো ১২টি প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন করছে।
অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট বা আশার যাত্রা শুরু সত্তরের দশকের শেষের দিকে। প্রথমদিকে আইনি সহায়তা প্রদান করে ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করে, সাংবাদিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে ও দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করে। সেখান থেকে বিস্তার ঘটে শিক্ষা, ঋণদান, ক্ষুদ্র কৃষিসহ বেশকিছু খাতে। সংগঠনটি ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের দরিদ্র নারীদের উন্নয়নে কাজ করে। এছাড়া সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। একইভাবে সমসাময়িক সময়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রশিকা। অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদনশীল, সামাজিকভাবে ন্যায়ভিত্তিক, পরিবেশগত দিক থেকে দূষণমুক্ত ও সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক একটি সমাজ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে শুরু হয় এর কার্যক্রম। বর্তমানে কৃষি খাতের উন্নয়নে রয়েছে ১৪টি প্রকল্প, ১০টি মৎস্য খাতে, বন ও মৎস্য খাতে নয়টি, সেচে আটটি এবং রেশন উন্নয়নে একটি প্রকল্প অর্থাৎ সর্বমোট ৪২টি প্রকল্প রয়েছে। এ সংগঠন ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৮ হাজার ৭১৪ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করেছে। এছাড়া সেভিং স্কিমসহ বেশ কয়েক রকমের আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানটি।
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে-আরা বেগম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে বলতে গেলে এনজিও খাতের যাত্রা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কমপ্লিমেন্টারি ও সাপ্লিমেন্টারি। কারণ তৃণমূল পর্যায়ে নিবিড়ভাবে ও ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ করার মতো জনবল সরকারের নেই। মাটির মানুষের জন্য অসংখ্য মানুষ পর্যায়ে যোগাযোগ নিশ্চিত করার সক্ষমতা এনজিওগুলোর বেশি। ফলে উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতাসহ ইতিবাচক বিষয়গুলো জন্ম নেয়। যার প্রভাব ওপরের দিকে এসে করপোরেট বা এলিট যেটাই বলেন সেটা অর্থনৈতিকভাবে জনপ্রিয় হয়। কারণ তৃণমূল পর্যায়ে যদি স্যান্ডেল-জুতা কেনার সক্ষমতা না থাকে, টুথপেস্ট কেনার ক্ষমতা না থাকে তাহলে এ ধরনের পণ্য কেনার ক্রেতা থাকবে না। সেই জন্য তৃণমূল মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আমরা বাড়িয়ে দিই, উৎসাহ দিই এবং তাদের চলতে বলি। সার্বিকভাবে সমাজকে আমরা তৈরি করি যেকোনো কিছু ক্রয়ের জন্য। এটা করতে গিয়ে ননএনজিও করপোরেটগুলোর উচ্চ মুনাফা দেখতে পাই। তখন সামাজিক ব্যবসার তত্ত্ব আঙ্গিকে আমরা এনজিওগুলো করপোরেট আদলে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা করি। লেবার ডিলিং, সেল প্রাইস ন্যায্য ও কম থাকে। ফলে মানুষের ক্রয় সক্ষমতা বাড়ে।’
তিনি আরো বলেন, ‘করপোরেটের মধ্যে আমরা কেউই ছিলাম না, কিন্তু এতে আসতে হচ্ছে। এতে অন্য করপোরেট, অন্য কোম্পানি একসময় ব্যাপক প্রোপাগান্ডা করত যে এনজিওগুলো ট্যাক্স ফ্রি ও তারা ট্যাক্স ফ্রি না, ফলে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। আসলে এনজিওগুলো ট্যাক্স ফ্রি না। বাজারে আমরাও যা, করপোরেটরাও তাই। শুধু আমাদের ক্ষুদ্র ঋণ এটা ট্যাক্স ফ্রি। আর সব জায়গায় আমাদের ট্যাক্স দিতে হয়। এখন এনজিওগুলো যেটা করছে ভালো করছে। কিন্তু আমরা এনজিওর মূল লক্ষ্য থেকে সরে আসিনি। বরং লক্ষ্যকে আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছি। যারা প্রফিট ম্যাক্সিমাইজ করছে তাদেরও ঝাঁকি দেয়া হয় যে তোমরা প্রফিট ম্যাক্সিমাইজ করো না, সামাজিক কাজে ব্যবহার করো।’
বৈষম্য, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, চিকিৎসা—এসব সামাজিক কাজের জন্য এনজিও শুরু হয়েছিল বলে জানান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এ বিষয়ে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখেছি, আশির দশকের পর থেকে এনজিওর মধ্যে তিন ধরনের প্রবণতা। একটা হলো পশ্চাদপসরণ, অর্থাৎ তাদের আদি প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার বা ঘোষণা থেকে পশ্চাদপসরণ হয়ে আর্থিক কর্মকাণ্ডে চলে যায়। আরেকটা হচ্ছে অঙ্গীভবন, অর্থাৎ রাষ্ট্রের সঙ্গে বা সরকারের সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড হয়ে যায়। এভাবে তারা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির একটা অংশ হয়ে যায়। প্রথমে যেখানে শোষণ-নিপীড়ন দিয়ে কথাবার্তা হতো, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে আসার কারণে একটা নির্দিষ্ট ব্যবস্থার মধ্যে থেকে নিরাপদ কাজ বেছে নিচ্ছে সংস্থাগুলো। তৃতীয় প্রবণতা হলো করপোরেটাইজেশন, বলা যায় একচেটিয়াকরণ। কিছু এনজিও বাণিজ্যিক সাফল্যের মধ্য দিয়ে বিশাল আকার ধারণ করল, বাকিরা তাদের সাব-কন্ট্রাক্টর হয়ে গেল। এ তিনটি প্রবণতার মধ্য দিয়ে এখন আমরা করপোরেট এনজিওর একটা উত্থান দেখতে পাচ্ছি।’
করপোরেট এনজিও হিসেবে প্রধানত ব্র্যাক কাজ করছে উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘তারা করপোরেট বিশ্বের জন্য বড় একটা মডেল। কারণ এনজিও যখন করপোরেটাইজ হয়ে যায় তখন কর-ভ্যাটের ক্ষেত্রে তারা মুক্ত থাকতে পারে। আবার এনজিওতে বেসরকারি মালিকানার একটা ধরন দেখা যাচ্ছে। বেসরকারি মালিকানা বলতে বুঝি একজনের মালিকানায় থাকবে। তারপর উত্তরাধিকার সূত্রে উত্তরসূরিরা মালিকানা পাবে। বিক্রি করতে পারবে, কেনা-বেচা করতে পারবে। এনজিওতে কেনা-বেচার বিষয়টি নেই কিন্তু নিয়ন্ত্রণ কিংবা উত্তরাধিকারদের ভূমিকা বা কর্তৃত্ব বা নিজেদের পারিবারিক নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলো মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই দেখতে পাই। গরিব মানুষের অংশহগ্রহণ, অংশগ্রহণমূলক—এ ধরনের তাত্ত্বিক বিভিন্ন বিষয় আছে, বাস্তবে দেখা যায় একক পরিবারের নিয়ন্ত্রণ। দেখা যায় এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ এবং এরপর তাদের উত্তরাধিকারদের নিয়ন্ত্রণ। ওইখানে যে মুনাফাটা আসে সেটা করপোরেট এক্সপ্যানশনের কাজেই লাগে। প্রান্তিক পুঁজিবাদী দেশের পুঁজিবাদ বিকাশের এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চাকরির সুরক্ষা বিবেচনায় বড় রকমের সংকট আছে। এনজিও খাত বলতে কোনো ইউনিফর্মড মডেল বোঝায় না। কারণ এখানে বিভিন্ন ধরনের কাজ হয়। কোনোটি পরিবেশ, কোনোটি ক্ষুদ্র ঋণ, কোনোটি শিক্ষা নিয়ে কাজ করে। আমরা ভূমি, কৃষি, পানি, পরিবেশ নিয়ে কাজ করি। যে এনজিওগুলো অধিকারভিত্তিক কাজ করে, তাদের নিজস্ব আয় সংস্থানের কোনো প্রকল্প নেই। ফলে এসব জায়গায় যারা কাজ করেন তাদের চাকরির সুরক্ষা সরকারি চাকরির মতো না। নির্দিষ্ট একটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে দাতা সংস্থার যে অর্থায়ন থাকে, সেটা ব্যবহার করে চাকরি যতটা সুরক্ষিত করা যায়, সেটা করা হয়। এর বাইরে সুরক্ষা দেয়ার মতো কোনো রিসোর্স থাকে না। আয়ের সংস্থান করতে পারে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির আওতায় যারা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কাজ করে সেসব এনজিও। এগুলোর সংখ্যা এখন অনেক বেশি। এসব সংস্থার অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে, সেটা দিয়ে তারা বিনিয়োগ করে। যে মার্জিনটা থাকে, যারা অনেক বছর ধরে কাজ করছে, বছর শেষে তাদের বড় পরিমাণের অর্থের সংস্থান রয়েছে। এ ধরনের এনজিওগুলো চাকরির সুরক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধা চাইলে দিতে পারে। কতটা দেয় সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।’ এনজিও খাতে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০১৮ সালে এনজিওগুলোর সুশাসন নিয়ে একটি অনুসন্ধান চালায়। এ বিষয়ে প্রকাশিত তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এনজিওগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা এবং প্রক্রিয়ায় মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। বেশির ভাগ এনজিওর লোকাল লেভেল বোর্ডের সদস্যরা প্রধান নির্বাহীর আত্মীর ও বন্ধু-বান্ধব হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাহী বোর্ড মিটিং না ডেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
এনজিওর জবাবদিহিতার বিষয়ে টিআইবির ওই রিপোর্টে বলা হয়, সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয় না। সেই প্রতিবেদনটি ফান্ডিং এজেন্সিকে দেয়া হয়। এমনকি মাঠের তথ্য সংগ্রহের বেলায়ও সংকট রয়েছে। বেশির ভাগ এনজিও তাদের উপকারভোগীদের কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করে না। ফলে ওই এনজিওগুলো জনস্বার্থে কতটুকু কাজ করতে পারছে সেটি প্রতিবেদনে উঠে আসে না। এনজিওগুলোর পলিসিও ট্রেনিংয়ে কর্মীদের অনুকূলে থাকে না। খুব কম এনজিও চাকরির বেতনের বিষয়টি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে থাকে। কর্মীদের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেয়ার জন্য বেশির ভাগই কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।
নিয়োগে ফান্ডিং এজেন্সি, এনজিওবিষয়ক ব্যুরো এবং স্থানীয় প্রভাবশালী লোকদের প্রভাব রয়েছে বলে সংস্থাটির একই প্রতিবেদনে উঠে আসে। এমনকি বেশির ভাগ এনজিওকে ফান্ড ছাড়ের জন্য এনজিওবিষয়ক ব্যুরোতে ঘুস দিতে হয়। এছাড়া কিছু এনজিওকে স্থানীয় লোকদের ঘুস দিতে হয়। লোকাল ও জাতীয় এনজিওর ক্ষেত্রে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর কর্মকর্তাদের ঘুস দিতে হয়। এর পাশাপাশি অনেক এনজিওর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এনজিওর অবদান অর্থনৈতিক পরিবর্তন, সুশাসন, দুর্নীতি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যেটি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত। তবে এখানে দুটো চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ সুশাসন ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে তহবিল ছাড়করণ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা ও অভ্যন্তরীণ সুশাসনের ওপর প্রভাব ফেলে। আবার সুশাসন, মানবাধিকার, দুর্নীতি প্রতিরোধ—এ ধরনের কাজে যারা জড়িত তাদের ওপর অন্য ধরনের চাপ আসে। খাতের ভেতরে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে অনেক এনজিও আছে পরিবারতান্ত্রিক। অনেকটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক গভর্ন্যান্স। প্রতিষ্ঠাতা বা নির্বাহী প্রধানরা তার পছন্দের লোকজন, পারিবারিক লোকজন দিয়ে পরিচালনা করেন। তবে এটি জেনারেলাইজ করা যাবে না। গণতন্ত্রের চর্চা বা সুশাসনের ঘাটতিটা এভাবেই শুরু হয়। নির্বাহী পরিচালের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার এখতিয়ার হচ্ছে তার বোর্ডের। এখন বোর্ড যদি তার পছন্দের লোকজন হয়, তখন ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়, বাস্তবে কোনো জবাবদিহি নিশ্চিত হয় না।’
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘এনজিওর কর্মকাণ্ড নিয়ে মিশ্র চিত্র রয়েছে। কিছু জায়গায় এনজিওগুলো ভালো ভূমিকা পালন করেছে বিভিন্ন সময়ে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য বিমোচনে কিছু ভূমিকা পালন করেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে কোনো কোনো এনজিও সঠিকভাবে ফান্ড ব্যবহার না করার ঘটনা রয়েছে। তাদের সুশাসন নিয়েও বড় ধরনের অভিযোগ উঠেছে সময়ে সময়ে। বড় এনজিওগুলোয় দেখা যায় জবাবদিহিতার বিষয়গুলো শক্তিশালী। ছোটদের ক্ষেত্রে শক্তিশালী না হওয়ায় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে মিশ্র চিত্র রয়েছে।’
‘এনজিও গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ: এন ইমপেরিকেল ইনকোয়ারি’ শিরোনামে মোহাম্মদ সেলিম ও মো. রুহুল আমিনের করা এক গবেষণায় এনজিওর সংকটগুলো উঠে আসে। গবেষণাপত্রটির মতে, যেখানে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় একজনই মুখ্য। তিনি হলেন সংগঠনটির নির্বাহী প্রধান। যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সবসময় তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন না। শুধু তা-ই নয়, আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি সীমাহীন সুবিধা পেয়ে থাকেন। ডোনারদের সঙ্গে যোগাযোগ, প্রজেক্টের বাজেট তৈরি, সংগঠনটির কমন ফান্ড এবং অন্য বিষয়গুলোয় প্রধান নির্বাহীর পুরো নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া লোকবল নিয়োগে কোনো নির্দিষ্ট পলিসি অনুপস্থিত। এ সিদ্ধান্তগুলো মূলত ম্যানেজিং ডাইরেক্টর নিজেই নিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে পদোন্নতি ও নিয়োগে প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে সম্পর্ক অথবা স্বজনপ্রীতির বিষয়টি ভীষণভাবে কাজ করে থাকে। ফলে এনজিওগুলোয় একনায়কতন্ত্র, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটে থাকে।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের এনজিও খাত নিয়ে বড় আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল। কিছু এনজিও করপোরেট স্টাইলে পরিচালিত হয়েছে। ফলে কিছু এনজিও জনমানুষের কাছে পৌঁছতে পারলেও অনেকে সটকে পড়েছে। এ খাতে ডিস্ট্যাবিলাইজেশনও দেখতে পাচ্ছি। মাইক্রোক্রেডিট এনজিওগুলোয় অর্থায়ন নিয়ে বড় ধরনের হেরফের দেখতে পেয়েছি। অনেকে বলে এনজিওগুলোর ৪০ বা ৬০ শতাংশ অর্থ প্রশাসনিক কাজে চলে যায়। দাতা সংস্থাগুলোরও এ বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে। অর্থায়ন কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ঘাটতিও রয়েছে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে এনজিও খাতের অবশ্যই রিফর্ম প্রয়োজন। গণ-অভ্যুত্থানে অনেক প্রান্তিক মানুষ একত্রিত হয়েছিল। দেশের এনজিওগুলো প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করে। কিন্তু আরো সম্পৃক্ত হয়ে প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হবে। এনজিওগুলো দলীয় আজ্ঞাবহ না হয়ে যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তাহলে ভালো হবে। দেখতে হবে বিদেশী কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন যেন না হয়। বাংলার মাটি ও মানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করার লক্ষ্যে এনজিও খাতের সংস্কার প্রয়োজন। জনমানুষের সঙ্গে এনজিওর আস্থার এখনো বড় ধরনের গ্যাপ রয়েছে। বড় এনজিও যেমন ব্র্যাক, আশা, গ্রামীণ মুখ থুবড়ে পড়ছে। এক্ষেত্রে সরকারের আজ্ঞাবহ না হয়ে স্বচ্ছতা ও স্বকীয়তার সঙ্গে কাজ করতে পারলে বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকর অনেক কিছু করা সম্ভব।’
এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আইন অনুযায়ী চলে। এক্ষেত্রে আমাদের তদারকি অব্যাহত আছে। বিধিবিধান সব ঠিক আছে। যেগুলো অনুসরণও করছে। তবে পরিবর্তন-পরিবর্ধন সব জায়গায় আসতেই পারে। সূত্র বণিক বার্তা
পাঠকের মতামত